নয়া দুনিয়া’র প্রাচীন বিস্ময়’
ধনসম্পদে পূর্ণ ভারতে পৌঁছানোর
সহজ জলপথের সন্ধানে নেমে কলাম্বাস ও আমেরিগো ভেসপুচির
মতো ভাগ্যসন্ধানী নাবিক আবিষ্কার করেন আজকের উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। ওই সময়ের ইউরোপে আমেরিকার অস্তিত্বটাই অজানা ছিল। তাই কলাম্বাসের
ভারতের সহজ জলপথ আবিষ্কারের আনন্দ ম্লান হওয়ার ধারাবাহিকতায় আবিষ্কার করা সমৃদ্ধ জনপদের নাম দিল নিউ ওয়ার্ল্ড
অর্থাত্ নয়া দুনিয়া। যদিও উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা এই পৃথিবীরই অংশ ছিল। অর্থাত্ ইউরোপীয়দের ভুল-জ্ঞানপ্রসূত আমেরিকা তাদের কাছে নয়া হলেও দুনিয়ায় আমেরিকা বা তার
মানুষ মোটেই নয়া ছিল না। যা হোক, সেই
নয়া দুনিয়ার প্রাচীন সভ্যতার অনেক নমুনা-কীর্তি
এখনকার মানুষকেও বিস্মিত করে। এখানে আমেরিকার তেমনি কিছু আশ্চর্য
প্রাচীন স্থাপনার পরিচয় জেনে নেয়া যাক।
তিয়ানাকু শহর পত্তনের আসল ঘটনার বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত করে কিছু বলা
না গেলেও ৫০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দে এর রমরমা অবস্থা
ছিল— এটা বলা যায়। এরপর ১২০০ শতকের মধ্যে এই
সভ্যতার ধারকরা হারিয়ে যায়। পুরাতাত্ত্বিকরা গবেষণা করছেন, ওই নগর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় টন টন ওজনের বড় বড়
পাথরখণ্ড কোন কৌশলে পার্শ্ববর্তী বিশাল তিতিকাকা হ্রদের একপাশ
থেকে অন্যপাশে পরিবহন করা হতো?
কানাডার ডাইনোসর পার্ক: আনুমানিক ৭৫ মিলিয়ন বছর আগে উত্তর আমেরিকার
দেশ কানাডার পশ্চিমাংশ ছিল লারামিডিয়া নামের এক দ্বীপ
মহাদেশের অংশ। এই
অঞ্চলের ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ঊষর-অনুর্বর জমিতে আবাস
ছিল বিশালাকার আর ক্ষুদ্রাকার
ডাইনোসরদের। অর্থাত্
মাত্র ৭ কোটি বছর আগেও এখানে ছিল ডাইনোসরদের
যুগ! গত শতাব্দীজুড়ে জীবাশ্রমবিজ্ঞানীরা এখানে ব্যাপক গবেষণা আর অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের হাজার হাজার
জীবাষ্মের নমুনা উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ক্রেটাসিয়াস যুগের সম্পূর্ণ ডাইনোসরের
কঙ্কাল রয়েছে শতাধিক।
কানাডার আলবার্টা প্রদেশে অবস্থিত ডাইনোসর পার্কে পর্যটকরা ইচ্ছে করলে এখনো চলমান গবেষণা-অনুসন্ধানে অংশ নিতে পারেন। আর ডাইনোসর প্রভিন্সিয়াল পার্ক হিসেবে পরিচিত ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা
ডাইনোসর সংক্রান্ত নিত্যনতুন নমুনা
চাক্ষুষ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে দুই ঘণ্টা পথের দূরত্বে ড্রুমহেলারে অবস্থিত রয়েল টাইরেল জাদুঘরে।
গুয়াতেমালার তিকাল পেতেন: আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন আশ্চর্যগুলোর একটি হচ্ছে পিতেন এলাকার তিকাল পিরামিড সমষ্টি। দুর্গম, ঘন
পাহাড়ি বনাঞ্চলের মধ্যখানে ২৫০ থেকে
৯০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে (সঠিক সময়টা নির্ধারণে গবেষণা চলমান রয়েছে) নির্মিত টিকালের ৫টি গগনচুম্বী
পিরামিড মহাকাশে সূর্যের অবস্থান
নির্ণায়ক মাপ-জোকেরও নির্দেশক। দক্ষিণ আমেরিকায় মায়া সভ্যতার
প্রত্ননির্দশনগুলোর গুরুত্ব আর বিশালত্বের দিক বিবেচনায় মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয় তিকালকে। এর রহস্যময়তাকে আরও গভীর করে তুলেছে একসময়কার বিচ্ছিন্ন শহর আর এখানে গড়ে তোলা টিকাল ন্যাশনাল
পার্কের ৫৫ হাজার একরের বিশাল আর রহস্যময় ঘনবর্ষণপ্রবণ
প্রাচীন বনভূমি।
মায়াসভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রত্ননিদর্শনসমৃদ্ধ উত্তর গুয়াতেমালার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এই লুপ্ত শহরটিতে রয়েছে রাজকীয়
অনুষ্ঠানাদির বিশাল প্রাঙ্গণ, খোলা চত্বরকে ঘিরে নির্মিত অসাধারণ সব উপাসনালয় আর
সুরম্য প্রাসাদ, বিশাল
সব স্কয়ার, আর এগুলোকে ঘিরে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়িঘরের চিহ্ন। সুবিন্যস্ত অসংখ্য পাথুরে সিঁড়িতে শোভিত উঁচু আর
মজবুত গঠনের প্রাসাদ ও মন্দিরগুলো দেখলে চোখ জুড়ায় সেই
সময়কার মানুষের শিল্প আর প্রকৌশল জ্ঞানের
বিষয়ে অবাক হন আজকের মানুষ। প্রত্ম-বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান আর
গবেষণায় একের পর এক এখানে আবিষ্কৃত হচ্ছে অসাধারণ আর চিন্তা জাগানিয়া সব নিদর্শন। যেমন চলতি বছরেরই গোড়ার দিকে হোলমুল এলাকায় আবিষ্কৃত নান্দনিক কারুকার্যময় ভবনের ছাদের নকশা তো
আবিষ্কর্তা-প্রত্নবিদদের হতবাক করে দিয়েছে। এছাড়া সান বার্তোলোতে পাওয়া ম্যুরাল বা দেওয়াল
চিত্র তো এতটাই
আগ্রহোদ্দীপক আর
গুরুত্বপূর্ণ যে ইউনেস্কো বিশ্ব-ঐতিহ্য হিসেবে তা সংরক্ষণের বিবেচনায় নিয়েছে।
No comments:
Post a Comment