How to download from youtube easily?

entertainments, Youtube Channels, software
Welcome to edu-knowledgeall.blogspot.com every Education knowledge for all

প্রকৃতির সহাবস্থানের দেশ পেরু



প্রকৃতির সহাবস্থানের দেশ পেরু


দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুপ্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এ দেশটির ভূপ্রকৃতিতে চরম বৈপরীত্যের সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয়এখানে আছে জনবিরল মরুভূমি, বরফাবৃত পর্বতমালা, উচ্চ মালভূমি আর গভীর উপত্যকাআন্দিজ পর্বতমালা পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ঘন ক্রান্তীয় অরণ্যজনবসতি তেমন ঘন নয়প্রশান্ত মাহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত লিমা দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজধানী১৫৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি স্পেনিশ নাগরিক ফ্রান্সিসকো পিজারো লিমা আবিষ্কার করেনএর আগে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পেরু১৬শ শতকে স্পেনের বিজেতাদের হাতে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন ঘটেআন্দিজের স্বর্ণ ও রুপার খনির আকর্ষণে স্প্যানিশরা খুব শীঘ্রই পেরুকে দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের সম্পদ ও শক্তির কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে দেশটি স্প্যানিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করেপেরুর মোট আয়তন ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গকিলোমিটার

পেরুর নাজকা মরুভূমিতে যদি একটি বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়া যায়, তাহলে অপেক্ষা করবে এক অপার বিস্ময়ককপিট থেকে দেখা যাবে মরুভূমির বুকে আঁকা অসংখ্য আঁকিবুঁকি, জ্যামিতিক নকশা আর পশু-পাখির ডিজাইনরাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাজকা এবং পালমা শহরের মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ অসাধারণ শিল্পকর্মএখানে আঁকা চিহ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্যামিতিক নকশা, হামিংবার্ড, মাকড়সা, হাঙ্গর আর নানা সরীসৃপের রেখাচিত্রচিত্রগুলো বিমান থেকে বা স্যাটেলাইটে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েপ্রায় ১৮০টির মতো নকশা রয়েছে এখানেখানেক জ্যামিতিক চিত্র বাদে বাকিগুলো পশু-পাখিদের প্রতিলিপি১৯৩০-এর দশকে সর্বপ্রথম বিমানযোগে ওই মরুভূমি পার হওয়ার সময় এ লাইনগুলো আবিষ্কৃত হয়এরপর থেকে এ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার শেষ নেইগবেষকদের ধারণা, নাজকা সম্প্রদায়ের লোকেরা কাঠ ও কাঠজাতীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে এ রেখাগুলো এঁকেছেঅনেকগুলো রেখার শেষপ্রান্তে কিছু কাঠের উপকরণ পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে কার্বন টেস্টের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ওই রেখা অঙ্কনের সময়কাল বের করেছেনতবে এ রেখাগুলো কী কারণে আঁকা হয়েছিল, তা নিয়ে গবেষণা শেষ হয়নিবিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ এরিক ফন দানিকেনের মতে, নাজকা লাইনগুলো মূলত আগন্তুকদের ব্যবহার করা এয়ারস্পেস ও সিগন্যাল সেন্টার হিসেবে কাজ করতআগন্তুকদের তখনকার মানুষেরা স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবদূত ভেবেছিল এবং দেবতা হিসেবে তাদের পূজা করেছিলতবে বেশির ভাগ গবেষকই এ মতের সঙ্গে ভিন্নতা প্রকাশ করেনঅনেকে মনে করেন, স্থানীয়রা তাদের উপাস্য দেবতাদের খুশি করার জন্য এ ধরনের বিশালাকৃতির রেখাচিত্র এঁকেছিল, যাতে দেবতারা স্বর্গ থেকেও তা দেখতে পানআবার কেউ কেউ মনে করেন, জ্যোতির্বিদ্যা ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের কাজে এ রেখাগুলো আঁকা হয়েছিলমানব সভ্যতার বিকাশে এ এক অসামান্য উপাদানকোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি ছাড়া শুধুমাত্র মানবিক প্রচেষ্টায় তৈরি এমন নান্দনিক নকশা সত্যিই অসাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব যুগের এই অগভীর পাতলা রেখাগুলো এ কয়েক হাজার বছর পরেও কিভাবে এত নিখুঁত আর অক্ষত আছে? এর উত্তর পেরুর ওই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছেনাজকা মরুভূমি বৃষ্টিশূন্য একটি এলাকা, বায়ুপ্রবাহও খুব কমসারা বছরই সেখানকার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকেএ কারণেই হয়তো আজও অক্ষত থেকে আমাদের বিস্ময়ের জোগান দিয়ে চলেছে এই নাজকা লাইনসতবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে সেখানেও২০০৭-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ব্যাপক বন্যা আর ভূমিধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই অঞ্চলটিইউনেস্কো ১৯৯৪ সালে পেরুর এই নাজকা লাইনসকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছেসারা বিশ্বের অসংখ্য পর্যটক আজও আসেন এ বিস্ময়কীর্তি দেখার জন্যকৃষি ও পর্যটন পেরুর অর্থনীতির বড় জোগানদাতাইনকা সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ, বিশেষ করে মাচু পিচু শহর দেখতে এখানে বেড়াতে আসেন বহু পর্যটকআন্দিজ পর্বতমালার পেরুর অংশে একটি পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত ইনকাদের হারানো শহর মাচু পিচুএখন অবশ্য পুরো পাহাড়টির নামই হয়ে গেছে মাচু পিচুসুরক্ষিত শহরটি পর্বতের চূড়া থেকে একেবারে খাড়াভাবে ৬০০ মিটার নিচে উরুবাম্বা নদীর পাদদেশে গিয়ে মিশেছেঅন্যদিকে হুয়ানা পিচু নামের আরেকটি পর্বত খাড়া উঠে গেছে আরও কয়েক হাজার ফুট উঁচুতেদুই দিক দিয়েই নিরাপদ শহরটিকে ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও ডাকা হয়
স্থানীয়দের বেশিরভাগই ইনকা বা অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্তইনকাদের ভাষা কেচুয়াএর সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি ভাষা আইমারা স্প্যানিশ ভাষার পাশাপাশি দেশটির সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছেপঞ্চদশ শতাব্দীর ইনকা সম্রাটরা অভিজাত আমলাতন্ত্রের সাহায্যে রাজ্য শাসন করতেনজনসাধারণ ছিলেন কৃষক শ্রেণিরতারা ভুট্টা, কড়াই শুঁটি, টমেটো, শুকনা মরিচ, তুলা প্রভৃতি উত্পাদন করতেনতখন কাউকে কর দিতে হতো না, কিন্তু প্রত্যেকেরই কিছু সময়ের জন্য সৈন্য বিভাগে কাজ করতে হতোঅথবা রাস্তা, প্রাসাদ, মন্দির নির্মাণ অথবা খনিজ পদার্থ উত্তোলনে সাহায্য করতে হতোইনকারা ঝুলায়মান পুল, মন্দির, পার্বত্য অঞ্চলের স্তরে স্তরে সাজানো গৃহ, কৃষি ভূমিতে জলদানের সুবিধার জন্য খাল এবং বিরাট বিরাট দুর্গ তৈরি করতেনআন্দিজ অঞ্চলে এখনও ইনকাদের তৈরি সেচ ব্যবস্থা, প্রাসাদ, মন্দির ও দুর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায়তাদের শল্যচিকিত্সা অনেক উন্নত ছিলপশম ও তুলা দিয়ে ইনকারা বস্ত্র প্রস্তুত করতেনপ্রত্যেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বস্ত্র উত্পাদন করতেনপঞ্চদশ শতাব্দীতে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফ্রান্সিসকো পিভারো মাত্র ১৮০ জন সৈন্য নিয়ে ইনকা সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেনইনকাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন পেরুর নিয়ন্ত্রণস্প্যানিশ উপনিবেশে পরিণত হয় পেরুনতুন উপনিবেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালায় স্প্যানিশরাধ্বংস করা হয় ইনকা সভ্যতার বহু প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে পতন হয় ইনকা সভ্যতারঅনেক ঐতিহাসিকদের মতে, স্প্যানিশরা যে সভ্যতা ধ্বংস করেছিল তা ছিল তাদের নিজেদের সভ্যতার চেয়ে অনেক উন্নত

No comments:

Post a Comment