ফিদেল
কাস্ত্রো
ফিদেল কাস্ত্রো বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধারে প্রায় চার যুগ বিশেষ ভূমিকা
রেখেছেন। এক সময়কার বিপ্লবী ক্যাস্ত্রো সুদীর্ঘকাল কিউবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব
পালনের পর অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালের শুরুতে ছোটভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে দায়িত্ব
হস্তান্তর করেন। ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এক
আদিবাসী পরিবারে কাস্ত্রোর জন্ম। তার বাবা ছিলেন ছোট্ট আখের খামারি। আর তাই তার
শৈশব মোটেও সচ্ছল ছিল না। এরপর ১৯৪৭ সালে নবগঠিত কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন কাস্ত্রো।
রাজনীতিতে যোগ দিয়েই তুখোড় বক্তা কাস্ত্রো তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ
করেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন। নির্বাচনে
পিপলস পার্টি যখন বিজয়ের ঠিক দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই
জাতীয় নির্বাচনের আগে জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা
দখল করেন। ১৯৫৩ সালে সশস্ত্র দল নিয়ে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন কাস্ত্রো।
সংঘর্ষে ক্যাস্ত্রোর দল পরাজিত হয়। সামরিক শাসক বাতিস্তার নির্দেশে কাস্ত্রোর ৮০
জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে বাস্তিতার হত্যার আদেশ থেকে বেঁচে
বেসামরিক কারাগারে ঠাঁই পান কাস্ত্রো। কিন্তু কারাগারেও তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার
চেষ্টা করা হয়।
শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে কাস্ত্রোকে হত্যা না করে
বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা। মনকাডা হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফিদেল
যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার মধ্য দিয়ে কিউবার রাজনৈতিক সংকট এবং তার সমাধানের
পথ-নির্দেশ করেন তিনি। তার এ বক্তৃতা আলোড়ন তোলে গোটা কিউবায়, জননায়কে পরিণত হন ফিদেল। বিচারে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হলেও প্রবল
জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপ্লবী দল গড়ার লক্ষ্যে
মেক্সিকোয় পাড়ি জমান কাস্ত্রো। সেখানে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত
অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে গুয়েভারা, জুয়ান আলমেইডাসহ একটি
বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই
মনকাডায় সেই হামলার নামানুসারে ফিদেল কাস্ত্রোদের এই গেরিলা দল 'জুলাই টুয়েন্টি সিক্স মুভমেন্ট' হিসেবে পরিচিত
হয়ে ওঠে। অন্যদিকে জেনারেল বাতিস্তা গেরিলা নিধন অভিযান আরও জোরদার করেন। গেরিলারা
সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বত ছেড়ে একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। স্থানীয় জনতা
গেরিলাদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় এক হাজার সেনা
গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা,
জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হটানোর চেষ্টা চালায়। কাস্ত্রোর
সেনারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি
কিউবা ছেড়ে পালিয়ে যান জেনারেল বাতিস্তা। ১৯৫৯ সালে দক্ষিণপন্থি স্বৈরাচারী শাসক
ফুলগেনাসিয়ো বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী। ক্ষমতা
গ্রহণ করে নতুন বিপ্লবী সরকার।
No comments:
Post a Comment