সুচিত্রা
সেন
বাংলা চলচ্চিত্রের তথা উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন বা রমা সেন, পুরো নাম রমাদাশ গুপ্ত। সহপাঠিরা তাকে কৃষ্ণা বলেই জানতেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণা অর্থাৎ সুচিত্রা সেন। পাবনার এই বাড়িতেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর কাল। মতান্তরে তার নানাবাড়ি তৎকালীন পাবনা জেলার বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের সেনভাঙ্গার জমিদার বাড়িতে জন্ম হয় তার। ছোটবেলায় দুরন্তপনা আর গান গাইয়ে মাতিয়ে রাখতেন সঙ্গীদের। তিনি ভালো গান গাইতে পারতেন বলে তার বান্ধবীদের কাছ থেকে জানা গেছে। সুচিত্রা সেন তার বাবা-মা, এক ভাই ও তিন বোনকে সঙ্গে নিয়ে শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের বাড়িতে।
১৯৪৭ সালের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার বাবা সপরিবারে ভারত চলে যান। সে সময় জেলা প্রশাসন ঊধর্্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিকুইজিশন করে। পরে ওই বাড়িটির প্রতি লোলুপদৃষ্টি পড়ে রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের। বাড়িটি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য জামায়াত নেতারা নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেন। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান তাদের বাড়িটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ইজারা দেন। পরে সুকৌশলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাড়িটি দখলের চেষ্টা চালান।
১৯৯১ সালের ১৮ জুন ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট বাড়িটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেওয়ার আবেদন করে। ওই বছরের আগস্টে ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের স্থায়ী বন্দোবস্ত না দিয়ে আবারও বাৎসরিক ইজারা দেয়। পরে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইজারা বাতিল করা হয়। কিন্তু জামায়াত নেতারা বকেয়া পরিশোধ সাপেক্ষে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট আবার ইজারা নবায়ন করিয়ে নেন। তারপর থেকে আজ অবধি তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি_ জানালেন পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। জানা গেছে, সুচিত্রা সেন পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় এক সুদর্শন মুসলমান যুবকের প্রেমে পড়েন তিনি। তার নাম ছিল মনসুর উদ্দিন। বিষয়টি সবার মধ্যে জানাজানি হলে তার পরিবার দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় বলে সুচিত্রা সেনের বান্ধবী অঞ্জলী গোস্বামী স্বীকার করেছেন। বর্তমানে তার বাড়িটি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পাবনা জেলা শাখার নিয়ন্ত্রণাধীন ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাবনা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই কলকাতার আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। এ উপমহাদেশের ও বাঙালিদের মধ্যে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। মস্কো চলচিত্র উৎসবে ১৯৬৩ সালে 'সাত পাকে বাঁধা' ছবির জন্য তিনি মনোনীত হন। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। উত্তম-সুচিত্রার এমন কোনো সিনেমা নেই যে সেটা ব্যবসা সফল হয়নি। খুব অল্পতেই তিনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পেঁৗছে যান। সুচিত্রার আগমনের সময় বাংলা সিনেমায় দুঃসময় চলছিল। তার আগমনে শুরু হয় ভক্তদের যত উদ্ভট সব জল্পনা-কল্পনা। সুচিত্রা সেন কেমন ভাবে দিন কাটান, কী খান, কীভাবে কথা বলেন ইত্যাদি নিয়ে প্রচণ্ড আলোচনা ও গবেষণা চলতে থাকে চায়ের দোকানে, রেস্তোরাঁ, রাস্তায় কিংবা বাড়িতে বা স্কুল-কলেজে। আনন্দের ব্যাপার এই যে, এখন পর্যন্ত সেই কল্পনার সমাপ্তি ঘটেনি। এ ছিল যেন বিস্ময়কর প্রতিভার এক জ্বলন্ত স্বাক্ষর।১৯৪৭ সালের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার বাবা সপরিবারে ভারত চলে যান। সে সময় জেলা প্রশাসন ঊধর্্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিকুইজিশন করে। পরে ওই বাড়িটির প্রতি লোলুপদৃষ্টি পড়ে রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের। বাড়িটি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য জামায়াত নেতারা নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেন। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান তাদের বাড়িটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ইজারা দেন। পরে সুকৌশলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাড়িটি দখলের চেষ্টা চালান।
বেশির ভাগ ছবিগুলোর সুচিত্রা সেনের নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি জামায়াতের রাহুগ্রাস থেকে দখলমুক্ত করা হোক।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ও পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু বলেন, জামায়াতের দখল থেকে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি মুক্ত করে 'সুচিত্রা সংগ্রহশালা' অথবা সুচিত্রা সেন ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে জেলাবাসী ঐক্যবদ্ধ।
No comments:
Post a Comment